রাজনৈতিক অঙ্গনে সব দিকে এগিয়ে থাকতে চায় জামায়াত।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বসে নেই দীর্ঘদিন কোণঠাসায় থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজনৈতিক, সামাজিক, কূটনৈতিক ও সাংগঠনিকসহ চতুর্মুখী তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করছে দলটি। নানারকম কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সবদিকে এগিয়ে থাকতে চায় জামায়াত। দেড় দশকের বেশি সময় ব্যাকফুটে থাকা জামায়াত তাদের বহুমুখী কর্মকাণ্ড বহুগুণে বাড়িয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বুধবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে ১০ দফা প্রস্তাবনা ঘোষণা করেছে জামায়াত। যেখানে দেশের নির্বাচন, আইন, বিচার, সংসদের প্রতিনিধি নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে কূটনৈতিক যোগাযোগ। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা দেশের জনগণের সমর্থন নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে অগ্রসর হতে চান।এদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর প্রথমবারের মতো দলীয় ব্যানারে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামী ২৮ অক্টোবর, সোমবার দুপুর ২টায় ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ জনসভা করবে দলটি। জামায়াতের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, মূলত ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকারের নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্ধারিত দিন ছিল। সেদিন জামায়াতে ইসলামী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করে। জামায়াতের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে। জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মারা যান। দিনটিকে স্মরণে রাখতেই ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে জামায়াত।এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন প্রভাবশালী ও উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে জোর দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে জাপান সফর করছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। বরাবরই কোণঠাসা রাখার মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে জামায়াতে ইসলামীকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছিল বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার। এখন শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুনভাবে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী জামায়াতে ইসলামী। তারই ধারাবাহিকতায় গত দুই মাসে চায়না, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। তার মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চায়না এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন।পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জনসচেতনতার জন্য মাইকিং, শান্তি সমাবেশ, মতবিনিময় সভা, লিফলেট বিতরণ, সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এমনকি ডাকাতি ঠেকাতে রাত জেগে ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় পাহারা দেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে খাবার পানি, দুপুরের খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড করছে দলটি। পাশাপাশি আতঙ্কিত নাগরিকদের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও গণসংযোগ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরও সারা দেশে হিন্দুদের মন্দির পাহারা, শহর পরিষ্কারসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে জোর:

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন প্রভাবশালী ও উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে জোর দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে জাপান সফর করছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি শিগগিরই দেশে ফিরে আবারও তুরস্কে সাংগঠনিক সফরে যাবেন বলে জানা গেছে। জামায়াতের তিনজন নায়েবে আমির ও দুজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সম্প্রতি আলাপকালে কালবেলাকে জানান, ১৬ বছর ধরে তারা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেননি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পালন করাটাই যেখানে দুঃসাধ্য ছিল, সেখানে কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগাযোগ রাখা আরও দুষ্কর ছিল। ফলে বরাবরই কোণঠাসা রাখার মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে জামায়াতে ইসলামীকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছিল বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার। এখন শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুনভাবে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী জামায়াতে ইসলামী। তারই ধারাবাহিকতায় গত দুই মাসে চায়না, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরানসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। তার মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত চায়না এবং দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল বৃহস্পতিবার কালবেলাকে বলেন, আমাদের যেসব সাংগঠনিক কাজ, তা করছি। রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে যাচ্ছি, দেশের পরিস্থিতি বলছি। আমরা পরিকল্পিতভাবে কর্মকাণ্ড করছি। মিছিল, সভা-সমাবেশ, সংগঠন সম্প্রসারণ, আমাদের জনশক্তির মানোন্নয়ন, দেশ গড়ার জন্য জনগণকে সচেতন করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করা—এগুলোই তো আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

তিনি বলেন, আমরা জাতির জন্য কল্যাণকর মনে করেই ১০ দফা ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ ঘোষণা করেছি। জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে এমন ঘোষণা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। জনগণই বলবে আমাদের এই প্রস্তাবনা কত সুন্দর? সেজন্য সময়ের প্রয়োজন। আমরা আমাদের সংস্কার কর্মসূচি জনগণকে জানাচ্ছি।

কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক প্রসঙ্গে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। কেননা, গত ফ্যাসিবাদী শাসনের সময় আমাদের কোনো স্পেস দেওয়া হয়নি। আমাদের অফিসে ডিপ্লোমেটিক কাউকে আসতে দেওয়া হয়নি। অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল, কোথাও প্রবেশাধিকার দেয়নি। নেতাদের নিরাপত্তা ছিল না। এখন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীকে দুনিয়াব্যাপী কূটনীতিকদের সামনে নিয়ে যাওয়ার আমাদের কর্মসূচিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ আছে। আমাদের বিভিন্ন বিষয় কূটনীতিকদের অবহিত করছি। জামায়াত যে বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তার গঠনমূলক নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি জানাচ্ছি। কূটনৈতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারাও আমাদের কাছে আসছেন। দেশে-বিদেশে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। দেশ গঠনে জামায়াতের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্মকাণ্ডে কূটনীতিকরা অত্যন্ত ইমপ্রেসড, সন্তুষ্ট। তারা জামায়াতের কাছে অনেক কিছু আশা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *